দীর্ঘমেয়াদী তহবিল

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - অর্থায়নের উৎস | NCTB BOOK

দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের মেয়াদ হচ্ছে ৫ বছর থেকে ঊর্ধ্বে যেকোনো সময়কাল পর্যন্ত। দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের উৎসগুলোর বিশেষ কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আছে। আমরা এবার এই বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করব। প্রথম বৈশিষ্ট্য এই যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিলের আকার সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি উৎসের তুলনায় বড় হয়, ফলে এই তহবিল বিভিন্ন স্থায়ী সম্পত্তি যেমন: ভূমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো পরিশোধ পদ্ধতি-সংক্রান্ত। দীর্ঘমেয়াদি তহবিল ঋণের মাধ্যমে গৃহীত হলে তা চুক্তি মোতাবেক পরিশোধ করতে হয়। আর যদি শেয়ার বিক্রয়ের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়, তবে তা মালিকের তহবিল হিসাবে বিবেচিত হয় বলে ব্যবসা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পরিশোধের প্রয়োজন হয় না। একমালিকানা ও অংশীদারি কারবারে মালিকের নিজস্ব মূলধনও সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবহার করা যায়। আয়কর- সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যটি হলো, শেয়ারের লভ্যাংশ করযোগ্য কিন্তু ঋণপত্রের সুদ করযোগ্য নয়। এ কারণে শেয়ার বিক্রয় করে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করলে যে খরচ হয়, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিলে অপেক্ষাকৃত কম খরচ হয়। এবার আমরা দীর্ঘমেয়াদি তহবিলের উৎস আলোচনা করব।

ক) ঋণ

যেকোনো প্রতিষ্ঠান সাধারণত মূল্যবান যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ, দালান-কোঠা নির্মাণ, জমি ক্রয় ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য বড় অংকের অর্থ দীর্ঘসময়ের জন্য জামানতের বিপরীতে ঋণ নিয়ে থাকে। দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠানের আয়, সুনাম, স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ, অতীত ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধবিষয়ক তথ্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হয় স্থায়ী বিনিয়োগের জন্য। যেমন: কারবারটির পরিসর বৃদ্ধি, কারখানা নির্মাণ, বিল্ডিং নির্মাণ, বড় আকারের যন্ত্রাদি ক্রয় ইত্যাদি। এই সকল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট কারবারি প্রতিষ্ঠান একটি প্রাক্কলন করে, যা Capital Budgeting নামে পরিচিত। সেখানে উক্ত বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যতে যে লাভ-ক্ষতি হবে তার পর্যালোচনা করা হয়। লাভক্ষতির এই প্রাক্কলন বিবেচনা করে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান সন্তুষ্ট হলেই ঋণ দেওয়া হয়।

খ) ঋণপত্র

ঋণপত্র বা Debenture-এর ক্ষেত্রে বড় অংকের ঋণ কেটে ছোট ছোট খণ্ডে বিক্রয়ের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। এটি শেয়ারের একটি বিকল্প। কিন্তু ঋণপত্রের একটি সুদের হার উল্লেখ থাকে যে হারে ঋণগ্রহীতা সুদ দিতে বাধ্য থাকে। ৫ বছর থেকে দীর্ঘমেয়াদি যেকোনো সময়ের জন্য ঋণ নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের মুনাফা না হলেও সবার আগে কারবারটি ঋণদাতাদের দেনা (সুদ) পরিশোধ করতে বাধ্য থাকে। ঋণপত্র বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থায়নে মূল সুবিধা হলো দীর্ঘমেয়াদে এর সুদের হার স্থির ও পূর্ব নির্ধারিত থাকে বলে আর্থিক ব্যবস্থাপকরা দক্ষতার সাথে অর্থায়ন পরিকল্পনা করতে পারে।

গ) লিজিং

লিজিং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের একটি অভিনব পদ্ধতি। একটি প্রতিষ্ঠানে যদি ব্যয়বহুল মেশিন, যন্ত্রপাতি, যানবাহন ইত্যাদির প্রয়োজন হয়, তখন সেগুলো সরাসরি ক্রয় করতে হয় অথবা সরাসরি ক্রয় না করে। লিজের মাধ্যমে লিজিং কোম্পানি থেকে ভাড়া নিয়েও ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে কোম্পানি মেশিনটির। মালিকানা পায় না। মেশিনটির মালিক লিজিং কোম্পানি। লিজ নেয়ার জন্য লিজিং কোম্পানিকে নির্দিষ্ট হারে ভাড়া (সুদের মতো) প্রদানের বিনিময়ে লিজকৃত সম্পত্তি ব্যবহার করার অধিকার অর্জিত হয়। ধরা যাক, একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একটি ফটোকপি মেশিন ক্রয় না করে ৩ বছরের জন্য একটি লিজিং কোম্পানি থেকে ভাড়া প্রদানের ভিত্তিতে লিজ নেয় এবং মেয়াদান্তে ফটোকপি মেশিনটি আবার লিজিং কোম্পানির কাছে ফেরত দেয়। অর্থাৎ লিজিং এর ফলে সম্পত্তির মালিকানা লিজিং কোম্পানির কাছে থাকে। লিজিংয়ের ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবার প্রয়োজন হয় না অথবা সঞ্চিতি তহবিলও ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এই কারণে লিজিং একটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস। নতুন অথবা ছোট প্রতিষ্ঠান যাদের মূলধনের পরিমাণ কম থাকে, সেসব প্রতিষ্ঠানও লিজিংয়ের মাধ্যমে ব্যয়বহুল মেশিন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারে। লিজিং কোম্পানি লিজকৃত সম্পত্তির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।

Content updated By
Promotion